২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:০৫ অপরাহ্ন, ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শুক্রবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আজকের ক্রাইম ডেক্স
ঝালকাঠির ছত্রকান্দায় একটি বাস দুর্ঘটনায় ১৭ জনের প্রাণহানির বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাসটিতে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হয়েছিল। দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার আগ মুহূর্তে চালক তাঁর আসনে বসে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন এবং বেশি যাত্রী নেওয়া নিয়ে তর্কাতর্কি করছিলেন। এক পর্যায়ে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার এসব তথ্য জানান জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মামুন শিবলী।
তিনি জানান, দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির জন্য বাসটির চালকের খামখেয়ালি, অপেশাদার আচরণ এবং বিধি ভেঙে সড়কের পাশে বড় পুকুর খনন দায়ী। সংশ্লিষ্ট গাড়িটির ফিটনেস থাকলেও চালক মোহন খানের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল হালকা যান চালানোর। কিন্তু তিনি চালাচ্ছিলেন বাসের মতো ভারী যানবাহন। এ ছাড়া সড়কের পাশের বড় ও গভীর পুকুরটি মৃত্যুকূপ হিসেবে রূপ নেয়। ঝালকাঠি থেকে পিরোজপুর বা মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা সড়কটি অত্যন্ত পুরোনো। এ সড়ক প্রশস্ত না করায় জমির মালিকরা সেখানে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছেন। রাস্তার দুই পাশে যদি মহাসড়কের মতোই ১০-১২ ফুট জমি অধিগ্রহণ করা থাকত, তাহলে দুর্ঘটনা ঘটলেও এত প্রাণহানি হতো না।
তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, বাস মালিকপক্ষের উচিত, কার হাতে গাড়ি দিচ্ছেন তার বিষয়ে যাচাই-বাছাই এবং তত্ত্বাবধান করা। তদন্তকারী আরও দুটি সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে– প্রকৃতপক্ষে চালক মোহনের খামখেয়ালিতে দুর্ঘটনা ও ১৭ জনের প্রাণহানি ঘটে। এ ছাড়া বাস মালিক সমিতি ও মালিকপক্ষ আয় বাড়ানোর ওপর জোর দিলেও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। পরিবহন চলাচলের নির্দেশনা মানতেও গড়িমসির তথ্য উঠে এসেছে। এসব প্রতিবেদনেও সড়কটি প্রশস্ত না হওয়া দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
উদ্ধারকারী সংস্থা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স ঝালকাঠির উপপরিচলক ফিরোজ কুতুবী বলেন, আমাদের তদন্ত কাজ প্রায় শেষ। এখন প্রতিবেদন তৈরি করে জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তদন্তে দুর্ঘটনার কারণ আর প্রতিবন্ধকতার সব বিষয় উঠে এসেছে।
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম বলেন, বাস দুর্ঘটনায় ১৭ জনের প্রাণহানির ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেয়েছি। সুপারিশ অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে ঝালকাঠি সদর থানার ওসি নাসির উদ্দিন বলেন, ওই দুর্ঘটনায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর একজনকে ধরতে অভিযান চলছে। নিহতদের দাফন কাজে সহায়তার জন্য আইজিপির বরাদ্দের এক লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে গত ২২ জুলাই সকালে পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া থেকে যাত্রী নিয়ে ঝালকাঠি যাওয়ার সময় ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা ঘটে। বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের ছত্রকান্দায় ‘বাসার স্মৃতি’ পরিবহনের বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পড়ে যায়। এতে ১৭ জন নিহত হন। আহত হন আরও ৩৫ জন। বাসটিতে যাত্রী ছিল ৬০ জনেরও বেশি।